একসময় বঙ্গোপসাগরে প্রায় ২৭ প্রজাতির হাঙ্গর থাকলেও এখন তা সংখ্যায় অনেক কমে গেছে।
এর কারণ হিসাবে অতিরিক্ত হাঙ্গর শিকার আর বাচ্চা হাঙ্গর ধরাকে দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। শুক্রবারও পটুয়াখালীর রাবনাবাদ নদীর মোহনা থেকে ২০ টন হাঙ্গর আটক করেছে বাংলাদেশের কোস্টগার্ড। কিন্তু স্থানীয়ভাবে হাঙ্গর জনপ্রিয় কোন মাছ বা খাবার না হলেও কেন হাঙ্গর শিকার করা হচ্ছে?
‘বঙ্গোপসাগরে হাঙ্গরের বর্তমান অবস্থা এবং এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব’ শিরোনামে ২০১১ সালে একটি গবেষণা নিবন্ধ লিখেছেন বর্তমানে চট্টগ্রামের জেলা মৎস্য দপ্তরের সহকারী পরিচালক বিক্রম জীৎ রায়। তখন তিনি সামুদ্রিক মৎস্য জরিপ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। মি. রায় বলছেন, বাংলাদেশে ১০ বছর আগেও যে সংখ্যায় হাঙ্গর ছিল, এখন তা অনেক কমে এসেছে। ”একসময় ১৫০-২০০টি যান্ত্রিক যানে বাণিজ্যিকভাবে হাঙ্গর আহরণ করা হতো। জাল ও বড়শির সাহায্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পটুয়াখালী, বরগুনা জেলার সাগর উপকূলে বাণিজ্যিকভাবে হাঙ্গর ধরা হতো। তখন বাণিজ্যিকভাবে হাঙ্গরের মাংস, চামড়া, পাখনা রপ্তানি হতো। সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে বেশ চাহিদা ছিল,” তিনি বলছেন। ২০০৮-২০০৯ সালে বাংলাদেশে ৩,৯৩৩ মেট্রিকটন হাঙ্গর ধরা হয়েছিল। ব্যাপকভাবে শিকারের কারণে বাংলাদেশে বড় আকারের হাঙ্গর প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে তিনি বলছেন।
গবেষকদের হিসাবে, বাংলাদেশে হাঙ্গর এবং হাউস (শাপলাপাতা মাছ) মিলিয়ে প্রায় ২৭টি প্রজাতি রয়েছে। বাংলাদেশে প্রজাতিগুলোর মধ্যে ইয়েলো ডগ শার্ক (টুইট্যা হাঙ্গর), মিল্ক শার্ক (কামোট হাঙ্গর), হ্যামারহেড হাঙ্গর (হাতুড়ী হাঙ্গর), বুল শার্ক (বলি হাঙ্গর) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বুল শার্ক ছাড়া এসব হাঙ্গর ততোটা হিংস্র নয়। বিক্রম জীৎ রায় জানান, বাংলাদেশে স্থানীয় কিছু কিছু এলাকার মানুষ হাঙ্গরের মাংস ও শুটকি খেতে পছন্দ করে। এছাড়া হাঙ্গরের মাংস, পাখনা, চামড়া এবং হাড়ের বিশ্বব্যাপী চাহিদা রয়েছে। পাখনা দিয়ে তৈরি সুপ হংকং, তাইওয়ান ও চীনের অভিজাত হোটেলে বেশ জনপ্রিয়। হাঙ্গরের পাখনায় মার্কারি নামক উপাদান থাকায় এসব দেশে নব দম্পতিকে হাঙ্গরের সুপ খাওয়ানো হয়।